Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মুগডাল চাষ

বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভাতের পরই ডালের স্থান। ডাল প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য। এতে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ। প্রোটিন ছাড়া অত্যধিক লাইসিন, পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা, চর্বি ও খনিজ রয়েছে। ডাল হিসেবে আমরা মূলত ছোলা, মটর, অড়হর, মাষকলাই, মসুরের বীজকে বুঝে থাকি। এ দেশে প্রায় সব রকমের ডালই চাষ করা হয়। এসবের মধ্যে মুগডাল অন্যতম। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি চাষ করেও ভালো দাম পাওয়া সম্ভব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুগডালের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল জেলায় আবাদ বেশি হয়।
 

জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক মুগের একাধিক উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বারি মুগ-২ (কান্তি), বারি মুগ-৩ (প্রগতি), বারি মুগ-৪ (রূপসা), বারি

মুগ-৫ (তাইওয়ানি), বারি মুগ-৬। এ ছাড়া বাংলাদেশে পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিনামুগ-৫, বিনামুগ-৬ ও বিনামুগ-৮।
জাতগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

 

বারি মুগ-২ (কান্তি) : গাছের উচ্চতা ৪০-৪৫ সেমি.। বীজের রঙ সবুজ। বীজের ত্বক মসৃণ। হাজার বীজের ওজন ৩০-৪০ গ্রাম। এ জাতটি দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমের শেষ দিকেও চাষ করা যায়। আমিষের পরিমাণ ২০-২৪%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ০.৯-১.১ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।
বারি মুগ-৩ (প্রগতি) : দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুমে বিলম্বে আবাদ করা যায়। আমিষের পরিমাণ ১৯-২১%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.০-১.১ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।


বারি মুগ-৪ (রূপসা) : এ জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুমে বিলম্বে বপন করা যায়। জাতটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
 

বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানি): গাছের পাতা, ফল ও বীজ আকারে বেশি বড়। বীজের রঙ গাঢ় সবুজ। হাজার বীজের ওজন ৪০-৪২ গ্রাম। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ফল একসাথে পাকে।
 

বারি মুগ-৬ : গাছের উচ্চতা ৪০-৪৫ সেমি.। একই সময়ে প্রায় সব শুঁটি পরিপক্ব হয়। পাতা ও বীজের রঙ গাঢ় সবুজ। দানার আকার বড়। প্রতি ১০০ বীজের ওজন ৫.১-৫.২ গ্রাম। গম কাটার পর এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত বপন করা যায়। এ ছাড়া খরিফ-২ ও রবি মৌসুমের শেষেও বপন করা যায়। হলুদ মোজাইক ভাইরাস এবং পাতায় দাগ রোগ সহনশীল। জীবনকাল ৫৫-৫৮ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ১.৫ টন।
 

বিনামুগ-৫ : সব ফল প্রায় একই সাথে পাকে। এ জাতটি কান্তি অপেক্ষা ৭-১০ দিন আগে পাকে। বীজের আকার কান্তি অপেক্ষা বড় এবং রঙ উজ্জ্বল সবুজ। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ১.৪ টন। পাতা হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন এবং সারকোস্পোরা রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।


বিনামুগ-৬ : সব ফল প্রায় একই সাথে পাকে। জীবনকাল ৬৪-৬৮ দিন। অনুমোদিত জাত কান্তি অপেক্ষা ১০-১২ দিন আগে পাকে। বীজের আকার কান্তি অপেক্ষা বড় এবং রঙ উজ্জ্বল সবুজ। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ১.৪ টন। পাতা হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন এবং সারকোস্পোরা রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।


বিনামুগ-৮ : গাছের উচ্চতা মাঝারি (৩৫-৪০ সে.মি)।   জীবনকাল কম, বপন থেকে পরিপক্ব পর্যন্ত ৬৪-৬৭ দিন। বীজের আকার মাঝারি ও উজ্জ্বল। ১০০ বীজের গড় ওজন ৪.০ গ্রাম। গ্রীষ্মকালে চাষ উপযোগী, এটি দিন নিরপেক্ষ বিধায় শীতকালেও চাষাবাদ করা যায়। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১.৮ টন। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ ২.২টন ফলন পাওয়া সম্ভব।
উৎপাদন প্রযুক্তি

 

মাটি : বেলে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি মুগ চাষের জন্য উত্তম। জমিটি হতে হবে মাঝারি উঁচু। মুগের জন্য জলাবদ্ধতা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
 

জমি তৈরি : জমিতে ‘জো’ আসার পর ভালোভাবে ৩-৪টি চাষ দিতে হবে এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এতে বীজের অঙ্কুরোদগম হার বেড়ে যায়। এছাড়া জমির সকল আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
 

বপনের সময় : এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে ফাল্গুন মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত  (ফেব্রুয়ারির শেষ হতে মার্চের মধ্য ভাগ)। খরিফ-২ মৌসুমে শ্রাবণ-ভাদ্র মাস (আগস্টের প্রথম হতে সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগ)। রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের জন্য বপনের উত্তম সময় হচ্ছে পৌষ-মাঘ মাস (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ হতে ফেব্রুয়ারির মধ্য ভাগ)।
 

সতর্কতা : আষাঢ় মাসে (মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই) অবিরাম বৃষ্টিতে মুগের ফল পচে যায়। চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে (মধ্য মার্চ) বীজ বপন সম্পন্ন করতে পারলে আষাঢ় মাসের আগেই ফসল সংগ্রহ করা যায় এবং ফল পচনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়। অন্যদিকে অনুমোদিত সময়ের আগে বীজ বপন করলে শীতের কারণে চারা মরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বীজের হার : জাতভেদে মুগের বীজের হার ভিন্ন হয়ে থাকে। বারি মুগ-২, বারি মুগ-৩ ও বারি মুগ-৪ এর জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি। বারি মুগ-৫ এর জন্য ৪০-৪৫ কেজি বীজের প্রয়োজন। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিতে হবে।

 

বপন পদ্ধতি : ছিটিয়ে ও সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা যায়। তবে সারিবদ্ধভাবে বোনা উত্তম। এক্ষেত্রে সারি হতে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি. এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০-১৫ সেমি. হলে ভালো হয়। বীজের গভীরতা ৩-৪ সেমি. হলে অঙ্কুরোদগমতা বেশি হয়।
সারের পরিমাণ : জমিতে হেক্টরপ্রতি নি¤œরূপ সার প্রয়োগ করতে হয়।

 

সার প্রয়োগ পদ্ধতি : শেষ চাষের সময় সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুনির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম অনুজীব সার প্রয়োগ করলে ভালো হয়। অনুজীব সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।


অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : মুগডালের ভালো ফলন পেতে হলে ক্ষেতের আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ছিটানো পদ্ধতিতে আগাছা দমন কঠিন হলেও কাজটি যথাসময়ে করতে হবে। ভালো ফলন পেতে হলে বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। অতিবৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া খরিফ-১ মৌসুমে বৃষ্টি না হলে বপনের আগে বা পরে একটি সেচ দিতে হবে। সেচ দিলে চারা গজানোর পর মালচিং করে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা

 

রোগ
মুগের পাতার দাগ রোগ দমন : সারকোস্পোরা ক্রোয়েন্টা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। পাতায় ছোট ছোট লালচে বাদামি বর্ণের গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান্ত পাতা ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বেশি আর্দ্রতা (৮০%) এবং উচ্চ তাপে (২৮ ডিগ্রি সে.) এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

 

প্রতিকার
১. ব্যাভিস্টিন নামক ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম/লিটার পানি হারে ১২-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
২. রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার (বারি মুগ-২, ৩ ৪ এবং ৫) করতে হবে।
মুগের পাউডারি মিলডিউ রোগ দমন : ওইডিয়াম প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। এ রোগে পাতায় পাউডারের মতো আবরণ পড়ে। সাধারণত শুল্ক মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বীজ, পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

 

প্রতিকার
১. বিকল্প পোষক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. টিল্ট-২৫০ ইসি ১ মিলি/লিটার পানি বা থিওভিট ২ গ্রাম/লিটার পানি হারে ১০-১২ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
মুগের হলদে মোজাইক রোগ দমন : মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত পাতার ওপর হলদে সবুজ দাগ পড়ে। সাধারণত কচি পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি নামক পোকা এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। বিকল্প পোষক ও সাদা মাটির আধিক্য এ রোগ দ্রুত বিস্তারে সহায়ক।

 

প্রতিকার
১. রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২. সাদা মাছি দমনের জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
৩. আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।

 

পোকা : মুগের জমিতে বিছাপোকা ও শুটি ছিদ্রকারী পোকা দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডেসিস ২.৫ ইসি বা সিমবুস ১০ ইসি ১ মিলি/লি পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ বার স্প্রে করা যেতে পারে।
 

ফসল সংগ্রহ : মুগডাল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা খুবই কষ্টকর। তাছাড়া অনেক জাত রয়েছে যেগুলোর ফল একসাথে পাকে না তাই কয়েকবারে সংগ্রহ করতে হয়। অন্যদিকে যেসব জাতের ফল প্রায় একসাথে পাকে সেগুলো একবারেই সংগ্রহ করা যায়। এক্ষেত্রে ফল পরিপক্ব হলে কাঁচি দিয়ে গোড়া থেকে গাছগুলো কেটে নিতে হয়। এভাবে কাটা হলে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অতঃপর গাছগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা গরু দিয়ে মাড়াই করে মুগডাল সংগ্রহ করা হয়।
ফলন : বপন/রোপণ সময় এবং জাতের ভিন্নতার কারণে ফলনেরও ভিন্নতা হয়ে থাকে। সঠিক যতœ ও পরিচর্যার মাধ্যমে হেক্টরপ্রতি গড়ে ১-১.৫ টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে।

 

মো. শাহাদাত হোসেন

আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বরিশাল, মোবাইল : ০১৭১৮৪০১৭৩৬, ই-মেইল :barisal@ais.gov.bd

 

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon